কী ভাবে তাঁর সাম্প্রতিক গবেষণায় পশ্চিমবঙ্গে মানুষের বসবাসের প্রাচীনতম সময়কাল খুঁজে পেয়েছেন তা জানালেন প্রত্নতত্ত্বের গবেষক ও শিক্ষক বিষ্ণুপ্রিয়া বসাক৷ আলাপে গৌতম বসুমল্লিক।
গৌতম বসুমল্লিক: প্রাগৈতিহাসিক দিক থেকে আমাদের এই বঙ্গদেশ কত প্রাচীন?
বিষ্ণুপ্রিয়া বসাক: বঙ্গদেশ কত প্রাচীন যদি বলতে হয়, তা হলে যেটাকে আমরা বাংলায় ছোটো নাগপুরের মালভূমি বা ইংরেজিতে সাউথ ইস্টার্ন মার্জিন বলি, অর্থাত্ আমাদের রাজ্যের যেটা পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চল, সে দিকে আমাদের দৃষ্টিটা নিয়ে যেতে হবে৷ এর ভিতরে পড়ছে পুরুলিয়া, বীরভূম, বাঁকুড়া, বর্ধমান-এর পশ্চিমভাগ এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের মূল অংশটাই৷ এই অংশের ল্যান্ডফর্ম খুবই পুরনো৷ একেবারে ‘প্রি-ক্যামব্রিয়ান’ যুগের৷ এখানে সেই প্রাগৈতিহাসিক যুগের নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে৷
গোটা ভারতীয় উপমহাদেশের নিরিখে সেটা কতটা প্রাচীন?
ছোটোনাগপুরের মালভূমি জায়গাটা ‘ডেকান-ট্র্যাপ’ বা দাক্ষিণাত্যের যে মালভূমি অঞ্চল, তার থেকেও পুরনো৷ ‘ডেকান-ট্র্যাপ’ জিওলজিক্যালি, মানে ভূতাত্ত্বিক দিক দিয়ে অনেক পুনর্গঠিত৷ ভূতাত্ত্বিক দিক দিয়ে ছোটোনাগপুরের মালভূমির বয়স বেশ কিছু কোটি বছর তো হবেই৷
ভারতে কত প্রাচীন প্রাগৈতিহাসিক যুগের নিদর্শন পাওয়া যায়?
ভারতে সবচেয়ে প্রাচীন যে ‘ডেট’ বা তারিখটা আমরা পাচ্ছি, সেটা হচ্ছে তামিলনাড়ুর ‘আতিরাম পাক্কাম’ বলে একটা কেন্দ্রে৷ সেখান থেকে প্রায় দেড় কোটি বছর আগেকার নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে৷ ওখানে সেই সময়কার কিছু যে টুলস অর্থাত্ পাথরের যন্ত্র পাওয়া গিয়েছে, যেগুলো আমরা বলছি ‘অ্যাসুলিয়ন টুলস’, এটা নিয়ে কাজ করেছেন, শর্মা হেরিটেজ সেন্টারের শান্তি পাপ্পু এবং তার কিছু বিদেশি সহকর্মী৷ এখনও পর্যন্ত এটাই ভারতে প্রাপ্ত প্রাচীনতম প্রাগৈতিহাসিক যুগের নিদর্শন৷
বাংলার ক্ষেত্রে প্রাচীনতম মানুষের নিদর্শন বা সময়কাল কত বছরের পুরনো?
পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড় অঞ্চলে সাম্প্রতিক কালে যে খননের কাজ হয়েছিল, এখন তার প্রাচীনত্ব নিরূপণের ‘ডেট’ বা তারিখগুলো এসে গিয়েছে৷ সেখানে আমরা এখনও পর্যন্ত প্রাচীনতম যে তারিখ পাচ্ছি সেটা আজ থেকে বিয়াল্লিশ হাজার বছর আগের৷ ওই একই অঞ্চলে মূল অযোধ্যা পাহাড় ও তার সংলগ্ন কাছাকাছি দুটো জায়গা থেকে নমুনা নিয়ে তা পরীক্ষা করে আমরা আরও চারটে প্রাচীন তারিখ পেয়েছি৷ সেগুলো যথাক্রমে এখন থেকে একুশ হাজার, পঁচিশ হাজার, একত্রিশ হাজার এবং চৌত্রিশ হাজার বছরের পুরনো৷ এবং এই প্রত্যেকটা ‘ডেট’ যে সব জায়গা থেকে পেয়েছি, সেই সব জায়গা থেকেই এই মাইক্রোলিটস, বা টুলসগুলো পাচ্ছি ৷
বিষ্ণুপ্রিয়া বসাক কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক।