ভাবতে সত্যিই অবাক লাগে যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র রাজ্য যেখানে প্রকৃতি উজার করে দিয়েছে তার সবকিছু । এই বাংলা তেই আছে সমুদ্র, হিমালয়্ , মালভূমি, ঘন জঙ্গল, নদী । কি নেই এখানে ? শুধু মরুভূমি ছাড়া বাকি সব রকমের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের সাজানো আমাদের এই বঙ্গভূমি । আর আছে সুপ্রাচীন বর্ণময় ইতিহাস । এই বাংলার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে । দুচোখ ভরে দেখার মতন আর মনের খিদে মেটাবার মতন উপাদান। যা আমাদের ঘর থেকে বার করে ছুটিয়ে বেড়ায় ।
প্রবাদপ্রতিম পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের সিনেমা ‘হীরক রাজার দেশে’। মনে পড়ে হীরক রাজার অত্যাচারে উদয়ন পণ্ডিত এক পাহাড়ের গুহায় লুকিয়েছিলেন?… সেই পাহাড়ই হল জয়চন্ডী পাহাড়। পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলার রঘুনাথপুর মহকুমার রঘুনাথপুর-১ ব্লকে অবস্থিত জয়চন্ডী পাহাড় একটি প্রাকৃতিক এবং ধর্মীয় পর্যটনস্থল। রঘুনাথপুর শহর থেকে মাত্র ২ কিমি এবং আদ্রা শহর থেকে মাত্র ৪ কিমি দূরে অবস্থিত এই পাহাড় ভূপ্রাকৃতিক দিক থেকে ছোটোনাগপুর মালভূমির অন্তর্গত।
জয়চন্ডী পাহাড়ের উপরেই রয়েছে চন্ডী মাতার মন্দির। মা চন্ডীর নামানুসারেই সম্ভবত এই পাহাড়ের নামকরণ হয়েছে। জয়চন্ডী কোনো একটি একক পাহাড় নয়, অর্ধচন্দ্রাকারে পাশাপাশি অবস্থিত ৪টি পাহাড়ের সমষ্টি। প্রতিটি পাহাড়ের নিজস্ব নাম আছে — যোগীঢাল, রামসীতা, জয়চন্ডী, সিজানো। পাশেই রয়েছে আরেকটি পাহাড়, কালী পাহাড়। পুরো এলাকা জুড়েই রয়েছে বড়ো বড়ো পাথর-বোল্ডারের ভূদৃশ্য। জয়চন্ডী পাহাড়ের ঢাল খুবই খাড়া। এখানে পর্বতারোহণ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও রয়েছে। জয়চন্ডী পাহাড়ের গড় উচ্চতা ১৫৫ মিটার (৫০৯ ফুট)। স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা যায়, বহুবছর আগে ডাকাতরা এই পথ ব্যবহার করত।
জয়চন্ডী মাতার মন্দির এখানকার অন্যতম আকর্ষণ। পাহাড়ের গায়ে প্রায় ৫০০-রও বেশি সিঁড়ি বেয়ে উঠলে পৌঁছে যাবেন পাহাড় চূড়োয় মন্দিরে। সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় বাঁকে বাঁকে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে কিনতে পাবেন পুজোর সামগ্রী, জল সহ অনেক কিছুই। পাহাড়ের উপরে রয়েছে এক ওয়াচ টাওয়ার ; শোনা যায় কাশীপুরের রাজার সৈন্যরা এখান থেকে নজর রাখতেন বহুদূর পর্যন্ত। সিঁড়ি ভেঙে পাহাড় চূড়োয় ওঠা যথেষ্ট কষ্টসাধ্য। কিন্তু সেই কষ্ট এক নিমেষেই দূর হয়ে যাবে, যখন আপনি পাহাড়ের উপর থেকে নিচের দিকে চারিপাশে তাকিয়ে দেখবেন। আহা! কি অপরূপ দৃশ্য। চারিদিকে শুধু সবুজ ঘেরা প্রান্তর, একদিকে শহরের ব্যস্ত জীবন ও অন্যদিকে পাহাড়তলীর গ্রামীণ জীবন।
Joy Chandi Pahar রঘুনাথপুর এ অবস্থিত। সমূদ্র সমতল হতে এর গড় উচ্চতা হল ১৫৫ মিটার (৫০৯ ফুট)। অঞ্চলটি ছোট নাগপুর মালভূমির অংশ। প্রতি বছর ক্রিসমাসের পরে পাহাড়ের পাদদেশে একটি মেলা অনুষ্ঠিত হয় এই মেলা প্রায়শই পর্যটকদের আকর্ষণে পরিণত হয় এবং স্থানীয় শিল্পীদেরও অনুপ্রাণিত করে। এই মেলায় সমস্ত স্থানীয় শিল্পীদের তাদের দক্ষতা দেখানোর জন্য প্রদান করে। প্রতি বছর ২৮ শে ডিসেম্বর থেকে ১ লা জানুয়ারি জয়চন্ডী পাহাড় পর্যটন উৎসব ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সময় অনেক মানুষের সমাগম দেখা যায়।
Joy Chandi Pahar ট্রেকিংয়ের জন্য একটি ভাল বিকল্প এবং প্রচুর ট্রেকার এখানে দেখা যায়। এই জায়গাটি দেখার অর্থ এই নয় যে আপনাকে ট্রেকিংয়ের জন্য যেতে হবে। এখানে পাহাড়ে ওঠার জন্য 480 টী সিঁড়ি আছে। পাহারের উপরে Joy Chandi মাতার মন্দির আছে। পাহারের উপর থেকে নিচের স্থানগুলির এবং রঘুনাথপুর শহরের অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন। বিশেষত বসন্তকালে, এখানে প্রকৃতির রঙ ফুটে উঠে। মনে হয় প্রকৃতি যেন তার সব রঙ ঢেলে দিয়েছে। পর্যটকদের মনকে শান্তি এবং আনন্দে ভরিয়ে দেয়।